প্রিয় বন্ধুরা
✓মুঘল সাম্রাজ্য:
*বাবর 1526 খ্রীষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে বাবর (ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত করে) ভারতে মােঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
* দিল্লির সুলতানি তখন ছিল অতি দুর্বল এবং ভারত ছিল পরস্পর বিবদমান বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত। বাবরের ভারত আক্রমণের প্রাক্কালে দিল্লি সুলতানি ছিল নানা দ্বন্ধে জীর্ণ।
✍️ বাবর (1526-1530 খ্রীষ্টাব্দ) ঃঃ
* মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন বাবর।
* বাবর পিতার দিক থেকে তৈমুরলঙ্গ এর উত্তরসুরী পঞ্চম পুরুষ এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিজ খাঁর অধস্তন চতুর্দশ পুরুষ।
* পানিপথের প্রথম যুদ্ধ (1526 খ্রীষ্টাব্দে) ঃ- বাবর এবং ইব্রাহিম লােদীর মধ্যে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হয় এই যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেন। জয়লাভের পরে বাবর দিল্লির সম্রাট পদে প্রতিষ্ঠিত হন এবং এই যুদ্ধের ফলে ভারতে মােঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম ভিত্তি রচিত হয়।
* বাবর নিজেকে দিল্লির ‘বাদশা’ বলে ঘােষনা করেন।
* খানুয়ার যুদ্ধ (1527 খ্রীষ্টাব্দ) হয় বাবর এবং রানা সংগ্রাম সিংহ-এর মধ্যে। এই যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেন।
* গােয়ালিয়রের চান্দেরী দুর্গের মেদিনী রাই-এর নেতৃত্বে রাজপুতরা সংঘবদ্ধ হয়েছিল। বাবর মেদিনী রাইকে পরাজিত করে চান্দেরী দুর্গ - দখল করেন।
* 1529 খ্রীষ্টাব্দে গঙ্গা ও গােগরা নদীর সঙ্গম স্থলে বাবর মামুদ লােদীকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধ গােগরার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
* বাবর উজবেগি ও তুর্কিদের কাছ থেকে তুঘলুমা’ যুদ্ধরীতি আয়ত্ত করেন।
* বাবর যুদ্ধক্ষেত্রে রুমি পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
* বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধ প্রথম আগ্নেয়াসস্ত্র ব্যবহার করেন।
* বাবরের আত্মজীবনী তুজুক-ই-বাবরী’ এটি তুর্কি ভাষায় লেখা।
* বাবর 1530 খ্রী আগ্রায় মারা যান। বাবরের সমাধি দেওয়া হয় কাবুলে।
* ভারতে বাবরের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান।
✓ প্রথম যুদ্ধযাত্রা :
• 1519 সালে, তিনি বিজাপুর দখল করেন, যেখানে বাবরের কামান এক ধ্বংসাত্মক রূপ নেয়।
• বাবর ভারত ছেড়ে চলে যায় এবং ভিরাকে হিন্দুদের অধিপতি করে দিয়ে যায়। পরবর্তীকালে তার স্থানীয়রা তাকে সিংহাসন চ্যুত করে।
✓ দ্বিতীয় যুদ্ধযাত্রা :
• সেই বছরই বাবর খাইবার পাস দিয়ে ভারতবর্যে আসেন। ইউসুফজাইকে দমন করার জন্য। এছাড়া পেশােয়ার দুর্গকে হিন্দুস্থানে ভবিষ্যৎ অভিযানের ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত করেন।
• কিন্তু তাকে চাঞ্চল্যকর সংবাদ দিয়ে বাদাখস্তানে পুনরাহবান জানানাে হয়।
✓ তৃতীয় যুদ্ধযাত্রা :
• 1520 সালে বাবর তৃতীয়বারের জন্য বিজাপুরের দিকে দুর্বারভাবে অগ্রসর হন।
• তিনি তার যাত্রাপথে বিরূপ আফগান উপজাতিদের ধ্বংস করে শিয়ালকোটের দিকে অগ্রসর হন, যেখানে তিনি যুদ্ধ ছাড়াই তা দখল করেন।
• দুটি অসফল অভিযানের পর বাবর শেষ পর্যন্ত কান্দাহার দখল করেন 1522 সালে, কারণ তার গভর্নর মৌলানা আবদুল বাগি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
• শাহবাগ সিন্ধু অঞ্চলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং বাবরের দ্বিতীয় পুত্র কামরান, কান্দাহারের ভারপ্রাপ্ত হন।
✓ চতুর্থ যুদ্ধযাত্রা অভিযান :
• 1524 সালে বাবর চুতর্থবার ভারত আক্রমণ করেন। সেই সময় পাঞ্জাবের গভর্নর দৌলত খান খুব ক্ষমতাশালী ছিলেন।
• সুলতান ইব্রাহিম দিল্লীতে তাকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু দৌলত খান তাকে ইব্রাহিমের কাছে যেতে বাধা দেন।
• সুলতানের ক্রোধ থেকে বাঁচানাের জন্য, দৌলত খান তার ছেলে দিলওয়ার খানকে বাবরের কাছে পাঠায়, তার কাকা আলম খানের সাহায্যে ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত করে সিংহাসন চ্যুত করার জন্য।
• দৌলত খান এবং তার দ্বিতীয় পুত্র গাজি খান পাহাড়ে পালিয়ে যান শুধুমাত্র বাবরের প্রত্যাবর্তনের জন্য।
• তারা দিলওয়ারের কাছ থেকে সুলতানপুর এবং আলম খানের কাছ থেকে দিপালপুর দখল করেন।
• ইব্রাহিমের প্রয়াস দমন করতে দৌলত খান ব্যর্থ হলেও বাবর লাহাের দখল করলে তাকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়।
• দিল্লীর সিংহাসনে বসার জন্য আলম খান বাবরের কাছ থেকে দিল্লী চেয়ে নেন।
• তার বদলে বাবর লাহাের এবং পশ্চিম পাঞ্জাবের সার্বভৌমত্ব লাভ করেন।
• আলম খান দিল্লীতে প্রত্যাবর্তন করলে কূটবুদ্ধিসম্পন্ন দৌলত খান তার উপর বিজয় লাভ করেন।
✓পঞ্চম যুদ্ধ অভিযান :
• 1525 সালের নভেম্বর মাসে বাবর শেষ বারের মত সীমান্ত পেরিয়ে তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে হিন্দুস্থান আক্রমণ করেন।
• এই সময় হুমায়ুন বাদাখশান পর্যন্ত বাবরের সাপেক্ষে ছিলেন। ঝিলাম নদী পেরিয়ে লাহােরের সেনাবাহিনী তার সাথে যােগদান করেন।
• তার অনুগামীদের সংখ্যা 12000 ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে কার্যকর ছিল 8000 জন।
• বাবরের আক্রমণে দৌলত খানের সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হল।
• দৌলত খানের বিশ্বাসঘাতকরাই বাবরকে জিতিয়ে ছিল। বাবরকে কিছু করতে হয়নি।
• যুদ্ধক্ষেত্রে দৌলতখানের মৃত্যু হল।
• 1526 খ্রীষ্টাব্দে 26শে ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন এই প্রথমবার তার নিজের অঞ্চলে জয়লাভ করেন উন্নত সার্বভৌ সেনাবাহিনীর সহায়তায়।
• ইব্রাহিম দিল্লী থেকে এবং বাবর সরহিন্দ ও আম্বালা থেকে যুদ্ধ করতে আসেন।
• 1লা এপ্রিল, বাবরের সৈন্যরা সুলতানের অশ্বারােহীবাহিনীর উপর আঘাত হানলেন এবং জয়লাভ করলেন।
• 12-19 এপ্রিল, দুই পক্ষের সেন্যবাহিনী পানিপথের নিকট পরস্পরের বিরুদ্ধে আঘাত হানল।
✍️ হুমায়ুন :
* হুমায়ুন বাবরের জ্যেষ্ঠপুত্র।
* 1530 খ্রীঃ বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন সিংহাসনে বসেন। * হুমায়ুন কথার অর্থ ভাগ্যবান কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন দুর্ভাগ্য পীড়িত নরপতি বিশেষ দেখা যায়না।
* হুমায়ুন তার তিন ভ্রাতা – কামরান, আসকারী ও হিন্দাল কে তাদের সাম্রাজ্যের তিন অংশে শাসনকর্তা নিযুক্ত করে। কামরানকে কাবুল ও কান্দাহার, আসকারীকে সম্বল এবং হিন্দালকে মেওয়াটের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে।
✓হুমায়ুনের যুদ্ধযাত্রা :
* কালিঞ্জর দুর্গ (1531 খ্রীষ্টাব্দ) ঃ- 1531 খ্রীষ্টাব্দে হুমায়ুন বুন্দেলখন্ডের কালিঞ্জর দুর্গর হিন্দু অধিপতি প্রতাপরুদ্রর বিরুদ্ধে অভিযান পাঠান।
দৌরার যুদ্ধ ঃ ইব্রাহিম লােদীর ভ্রাতা মামুদ লােদী আফগানদের একটি শক্তিজোট গঠন করে। চুনার দুর্গের অধিপতি শের খাঁ ও এই শক্তি সঙ্ঘে যােগ দেন। হুমায়ুন দৌরার যুদ্ধে এই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন।
✓ চুনার প্রতিরােধ (1532 খ্রীষ্টাব্দ):
হুমায়ুন শের শাহের চুনার দুর্গ প্রতিরােধ করেন। যিনি শের শাহকে নামমাত্র উপঢৌকন দেন, যা মেনে নেওয়া শের শাহের মস্ত বড় ভুল ছিল।
✓ বাহাদুর শাহের সঙ্গে যুদ্ধ (1535-1536 খ্রীষ্টাব্দ)
1531 সালে বাহাদুর শাহ মালৰ দখল করেন। তিনি চতুর্থ রাইসিন দখল করেন এবং 1533 সালে চিতােরের প্রধানকে পরাজিত করেন।
✓ চৌসার যুদ্ধ (1539 খ্রীষ্টাব্দ) :
যুদ্ধ থেকে হুমায়ুনের প্রত্যাবর্তনের পর শের শাহ তার সেনাবাহিনীকে অবরােধ করেন। উভয় সৈন্যই আক্রমণ করতে দেরী করল এবং বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টিতে মুঘল শিবির বন্যায় ভেসে গেল। হুমায়ুন পরাজিত হল।
✓ কনৌজের যুদ্ধ (1540 খ্রীষ্টাব্দ):
আগ্রায় পৌঁছানাের পর হুমায়ুন এবং তার ভাই কামরান স্থির করল যে তারা শের শাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। কিন্তু তাদের ভাইদের মধ্যে মতবিরােধের জন্য হুমায়ুন কনৌজের যুদ্ধে একাই লড়াই করে পরাজিত হলেন। হুমায়ুন পলায়নে বাধ্য হলেন এবং শের শাহ দিল্লী ও আগ্রার অধীপতি হলেন।
• হুমায়ুন প্রায় 15 বৎসর নির্বাসনে কাটিয়েছেন এবং শাহ হুসেন আখুন-এর রাজত্বে সিন্ধ প্রদেশে ভ্রমণ করেন। পরে তিনি ইরানে যান।
• শেরশাহের মৃত্যুর পর 1555 খ্রীষ্টাব্দে হুমায়ুন ভারত আক্রমণ করে তার ভাইকে ও আফগানদের পরাজিত করেন। পুনরায় ভারতের অধিপতি হলেন।
• তিনি দিল্লীতে দ্বিতীয় রাজধানী “দিন পানাহ” স্থাপন করেন।
• হুমায়ুনের সমাধিস্তম্ভকে তাজমহলের প্রােটোটাইপ বলা হয়ে থাকে। এত মার্বেল পাথরের তৈরী দুটি গম্বুজ যেখানে কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অষ্টভূজাকৃতির। ইহা তার বিধবা পত্নী হাজী বেগম কর্তৃক নির্মিত হয়েছে।
• 1542 সালে আকবর জন্মগ্রহণ করেন যখন হুমায়ুন নির্বাসনে ছিলেন।
• 1555 সালে হুমায়ুন আফগানদের থেকে মুঘল সিংহাসন পুনরায় দখল করেন। কিন্তু, 1556 সালে তিনি তার লাইব্রেরী “শের মণ্ডলের” সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান।
• এর জন্য তাকে বলা হয়, “He jumbled throughout life and was humbled out of life"
• তাঁর বােন গুলবদন বেগম, হুমায়ুননামা’ লিখেছিলেন।
✍️শূর সাম্রাজ্য (দ্বিতীয় আফগান সাম্রাজ্য 1540-1545)
✓শেরশাহ (1540-1545) :
• তিনি হাসান খানের পুত্র ছিলেন। হাসান খান ছিল সাসারামের জায়গীরদার।
• 1540 সালে তিনি দিল্লীর শাসক হন।
• তার বাল্যনাম ছিল ফরিদ খাঁ, 1472 খ্রীষ্টাব্দে তিনি বিহারে জন্মগ্রহণ করেন।
• বিহারের সুলতান বহর খাঁ লােহানির অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন, বহর খাঁ লােহানি-র মৃত্যুর পর তিনি তাঁর নাবালক পুত্র জালাল খাঁ-র অভিভাবক নিযুক্ত হন ও ধীরে ধীরে বিহারের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠেন।
• চুনার দুর্গের অধিপতি মারা গেলে শের খাঁ তার বিধবা পত্নী লাড মালিকাকে বিবাহ করে দুর্গটি নিজ অধিকার ভুক্ত করেন
• 1534 সালে জালাল খাঁ, বিহারের আমির ওমরাহ এবং বাংলার সুলতান মামুদ শাহের সম্মিলিত বাহিনীকে তিনি সুরজগড়ের যুদ্ধে পরাজিত করে বিহারের স্বাধীন নরপতিতে পরিণত হন।
• 1536 খ্রীষ্টাব্দে শেরশাহ বাংলার রাজধানী গৌড় অবরােধ করেন। শের খাঁয়ের শক্তি বৃদ্ধিতে হুমাযুন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন এবং চুনার দুর্গ অবরােধ করেন।
• 1539 খ্রীষ্টাব্দে চৌসার যুদ্ধে শের খাঁর হাতে হুমায়ুন শােচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
• 1540 সালে বিলগ্রাম বা কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।
• তিনি দিল্লীর সিংহাসনে বসার পর পাঞ্জাব, সিন্ধু, মূলতান, মালব রাজ্য, গােয়ালিয়র, রণথম্বাের ও মাড়ােয়ার দখল করেন।
• তিনি তার রাজত্বের ৫ বছরের মধ্যে একটি সুশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
✓ শের শাহ (1540-1545 খ্রীষ্টাব্দ) :
শের শাহ তার কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় চারটি মন্ত্রক গঠন করেন যথা—
• দিওয়ান-ই-ওয়াজিরত ওয়াজির ছিলেন অর্থ ও রাজস্ব বিভাগের প্রধান।
• দিওয়ান-ই-আরিজ : সামরিক প্রধান শাসিত।
• দিওয়ান-ই-রসালত : বিদেশ মন্ত্রী দ্বারা শাসিত।
• দিওয়ান-ই-ইমশা : যােগাযােগ মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত। D প্রশাসন :
• শের শাহ সাম্রাজ্য 47টি সরকার দ্বারা গঠিত
• প্রতিটি সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একজন মুখ্য শিকদার ছিলেন।
• প্রতিটি সরকারের বিচারক হিসাবে একজন মুখ্য মুন্সিফ ছিলেন।
• প্রতিটি সরকার পরগণা দ্বারা বিভক্ত এবং একেকটি পরগণার অন্তর্ভুক্ত হল
• শিকদার—সামরিক আধিকারিক।
• আমিন—ভূমি রাজস্ব আধিকারিক।
• ফোতেদার—কোষাধ্যক্ষ।
• কারকুন—হিসাবরক্ষক।
✓ স্থাপত্য :
• নতুন রৌপ্য মুদ্রা দাম’হিসাবে অভিহিত যাহা 1835 খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
• 4টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং সড়কের ধারে পান্থশালা নির্মাণ। যথা—
• সােনারগাঁ থেকে সিন্ধ পর্যন্ত।
• আগ্রা থেকে বুরহামপুর পর্যন্ত।
• যােধপুর থেকে চিতাের এবং
• লাহাের থেকে মুলতান।
• দিল্লীর নিকটে যমুনা নদীর তীরে নতুন শহর নির্মাণ (পুরাতন কেল্লা এবং ইহার মসজিদ)।
• সাসারামে একটি মুসােলিয়াম নির্মাণ যাহা ভারতীয় স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসাবে পরিচিত।
•তাহার রাজত্বে বিশেষ পৃষ্ঠপােষকতায় মালিকমহম্মদ জয়সীর লেখা বিখ্যাত হিন্দী রচনা “পদ্মাবতীর” প্রকাশিত হয়েছিল।
• শেরশাহ হজরত-ই-আলা খেতাব করায়ত্ব করেন।
• চুনার কেল্লার শাসকের বিধবা পত্নী লাদ মালিকাকে বিবাহ করে চুনার দুর্গ দখল করেন।
• 1539 খ্রীষ্টাব্দে তিনি চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাজিত করে সম্রাট শেরশাহ হিসাবে খ্যাত হন।
• 1540 খ্রীষ্টাব্দে কনৌজ বা বিলগ্রামের যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাজিত করে এবং কনৌজ রাজ্যের অধিপতি হলেন।
• শেরশাহের 5 বছরের সংক্ষিপ্ত শাসনকালে তিনি সুদক্ষ প্রশাসনিক কাঠামাে, ভূমি রাজস্ব নীতি এবং আরও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যেটা তাহার প্রজাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিকল্পে।
• তিনি সারা রাজ্যে রূপয়া’ নামে মুদ্রা প্রবর্তন করেন এবং ওজন-পরিমাপের একটি মাপকাঠি চালু করেন।
• তিনি বহু জাতীয় সড়ক নির্মাণ করে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন করেন। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রােড (জি.টি. রােড) তাঁহারই দ্বারা নির্মিত যেটি কলিকাতা থেকে পেশােয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত।
• তিনি তাহার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সেনা ছাউনি নির্মাণ করে একটি শক্তিশালী সৈন্য দল মজুত করেছিলেন প্রতিটি ছাউনিতে।
• তিনি স্থানীয় অপরাধ দমনে স্থানীয় শাসন নীতি প্রবর্তন করেন। অপরাধীদের চিহ্নিতকরণে ব্যর্থ মুকাদ্দমদের দণ্ড দেওয়া হইত।
• জমির পরিমাপ করা হইত এবং গড়ে , অংশ স্থির করা হইত ভূমি কর হিসাবে। কৃষকদের জমির পাট্টা এবং কোয়াবুলিয়াত (সম্মতি দলিলপত্র) দেওয়া হইত, যাহা কৃষকদের অধিকার ও খাজনা নির্দিষ্ট করা থাকত। জমিদারী প্রথা তুলে খাজনা সরাসরি আদায় করা হইত।
• তিনি দিল্লীতে পুরানাে কেল্লা নির্মাণ করেন।
• সম্রাট হিসাবে তিনি মালওয়া (1542 খ্রীষ্টাব্দ), রনথাম্বাের (1542 খ্রীষ্টাব্দ), রাইসিন (1543 খ্রীষ্টাব্দ), রাজপুতানা যাহা মারওয়াড়ের সংযােজন (1542 খ্রীষ্টাব্দ), চিতাের (1544 খ্রীষ্টাব্দ) এবং কলিঞ্জর (1545 খ্রীষ্টাব্দ) জয় করেন।
• কলিঞ্জর দখলের সময় 1545 খ্রীষ্টাব্দে তিনি মারা যান। সাসারামে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
• শেরশাহের স্থলে ইসলাম শাহ (1545-1554 খ্রীষ্টাব্দ) রাজা হন এবং পরে ইসলাম শাহের স্থলাভিষিক্ত হলেন মহম্মদ আদিল শাহ (1554-1555 খ্রীষ্টাব্দ)।
✓ কেন্দ্রীয় শাসন:
•কেন্দ্রে শাসন ব্যবস্থার শীর্ষে ছিলেন স্বয়ং সম্রাট। তাকে সাহায্য করার জন্য ছিলেন চারজন মন্ত্রী।
দেওয়ান-ই-উজিরা (রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের প্রধান)
দেওয়ান-ই-আরিজ (সেনাবাহিনীর প্রধান) যা দেওয়ান-ই-রসালৎ (বিদেশ দপ্তরের প্রধান)
দেওয়ান-ই-ইক্সা (যােগাযােগ ব্যবস্থার প্রধান)
• চৌধুরী’, ‘মুকাদ্দম’, ‘আমিন’ প্রমুখ কর্মচারীরা কর আদায় করতেন।
• উৎপন্ন শস্যের এক তৃতীয়াংশ রাজস্ব হিসাবে দিতে হত এবং তা শস্য বা নগদ অর্থে দেওয়া যেত।
» প্রজাকে দেয় খাজনা ও তার স্বত্ব নিরূপণ করে সরকার থেকে প্রজাকে পাট্টা নামে এক প্রকার দলিল দেওয়া হত। প্রজারাও নিজেদের স্বত্ব ও রাজস্ব আদায়ে শর্ত স্বীকার করে সরকারকে এ দলিল স্বাক্ষর করে দিত। তার নাম কবুলিয়ৎ।

পরের পর্ব গুলো???
ReplyDelete